প্রতিদিনের মত আকাশ রাঙিয়ে আজও সূর্য উঠেছে। সে সূর্যের আলোয় আজও অম্লান অর্ধশত বছর আগের একটি দিনের স্মৃতি। ৭ই মে টাংগাইলের মির্জাপুর গ্রামে গণহত্যা দিবস।
'৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এ-ই দিনে পাকিস্তান বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সাথে নিয়ে মির্জাপুর গ্রামে নিরীহ মানুষের উপর চালায় অত্যাচার, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ব্যপকহারে হত্যা।সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে আজও মির্জাপুরবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠে।
মির্জাপুরবাসীর একটা বড়ো ভরসার জায়গা ছিল দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি ভরসা ছিলেন আসহায় মানুষের। যিনি মির্জাপুর আলোকিত করে ছিলেন বিনাখরচে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার আলোয়। আলোকিত করে ছিলেন দেশকে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জন্মভূমির মায়ায় গ্রামে ফিরে এসেছিলেন তিনি। স্বোপার্জিত সম্পদ নিয়ে সেই ত্রিশের দশকে নারী-পুরুষ সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, নরীর মর্যাদা, স্বাবলম্বন ও ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন। মানুষের জন্যই গড়ে তুলে ছিলেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।কমুদিনী হাসপাতাল (১৯৩৮), ভারতেশ্বরী হোমস (১৯৪৫), কুমুদিনী মহিলা আবাসিক ডিগ্রি কলেজ(১৯৪৩), দেবেন্দ্রনাথ কলেজ (১৯৪২) প্রতিষ্ঠা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই যখন দেশত্যাগের হিড়িক পড়েছিল তখন রণদা প্রসাদ সোচ্চার ছিলেন এই উচ্চারণে- আমি তো কোন অপরাধ করিনি আমি কেন দেশ ছাড়বো?তাঁর সে দেশাত্মবোধ মর্যাদা পায়নি অকৃতজ্ঞদের কাছে।রণদা প্রসাদ সাহাকে যারা ভারতীয় দালাল বলে অপপ্রচার চালিয়ে ছিল সেই তারাই তাঁকে হত্যা করার সুযোগ নিয়েছিল '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে।পুত্রসহ তাঁকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে স্বাধীনতার বেদীমূলে।
আজকের এই দিনে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রাসাদ সাহা - আমাদের প্রাণপ্রিয় জেঠামনি ও রবিদার আত্মার শান্তি কামনা করি। শান্তি কামনা করি ৫৯ জন শহীদের বিদেহী আত্মার জন্যে।